শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:১০ পূর্বাহ্ন
মোঃ আরিফুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার যশোর:-
বর্তমান সময়ে কোমলমতি শিশুদের যে বয়সে খেলাধুলার,হাসি,আনন্দ, দুষ্টুমি করে কাটানোর সময়।ঠিক সেই সময় তাদের কে পাঠানো হয় কঠিন থেকে কঠিনতম লেখাপড়ার নামে অসুস্থ প্রতিযোগীতায়।
সেই সঙ্গে অভিভাবকরা তাদের সাথে তাল মিলিয়ে প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়ে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।
সাম্প্রতিক এক স্কুলে সামনে এক অভিভাবিকার সাথে কথা বললাম। উনার নাম আসমাউল হুসনা,তিনি এক জন গৃহিণী, শিক্ষাগত যোগ্যতা তিনি এম এ পাস। উনার ২টি কন্যা সন্তান। বড় জনের বয়স ১১বছর ছোট জনের বয়স ০৬ বছর। নওয়াপাড়া,অভয়নগর,যশোরে অবস্হিত একটি কিন্ডারগা্র্ডেন স্কুলের নার্সারীতে ০৬ বছরের মেয়ে টি পড়ে।
উনাকে বললাম আপনার মেয়েকে কত বছর বয়সে স্কুলে দিয়েছেন? তিনি বললেন ৫ বছর বয়সে স্কুলে দিয়েছি,তার আগে স্কুলে ভর্তির জন্য বাসায় প্রাথমিক শিক্ষা দিতাম। ০৩ বছর বয়স হতে হাতে খড়ি দিতাম। প্লে গ্রুফে বই ছিল বাংলা, অংক, ইংরেজি, সাধারণজ্ঞান, অংকন,বাংলা গ্রামার,ইংরেজী গ্রামার।
প্রতিটি বিষয়ের জন্য ০৩টি করে খাতা,একটি করে স্কুলে জমা, একটি করে টিউটার ম্যাডামের কাছে ও আর একটি করে হোম ওয়ার্ক এর জন্য।
সব গুলি বই, খাতা, পেনসিল বক্স,পানির পাএ সহ ব্যাগের ওজন সর্বনিন্ম ০৭/০৮ কেজি বহন করতে হয়।
তিনি আরও জানান সকাল ৭.৩০মি স্কুল, তার পর বাড়ীতে গিয়ে বিকালের টিউটর পড়া করানো,০৩টায় পড়াতে নিয়ে যাওয়া, বিকালে আরবি হুজুরের পড়া, সন্ধায় আবার স্কুলের পড়া সব গুলো বিষয়ের পড়া ও হোম ওয়ার্ক করানো তার পর ঘুম। আবার সকালে একই কাজ।
আর পড়া লেখার বিষয় বস্তু হলঃ-নার্সারীতে কবিতা লেখা, শব্দ গঠন, বাক্য তৈরি, এলোমেলো শব্দ দিয়ে বাক্য তৈরি, বাক্য রচনা,বাংলা গ্রামার,ইংরেজি গ্রামার,চিঠি, দরখাস্ত, সারাংশ সহ যা যা আছে সব।
আর অংকের ক্ষেএে আর ব্যাপক, ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত বানান বাংলা ও ইংরেজিতে, এলোমেলো থেকে সঠিক গঠন, ১ থেকে ২০, ৩০ ঘরের নামতা, যোগ বিয়োগ, গুণ ভাগ সব আছে।
চিত্র অংকন হাতি, ঘোড়া, ময়ূর, দৃশ্য, জাহাজ, ব্রিডিং, সহ সকল প্রকার রং ব্যাবহার করে জীবন্ত ছবি আঁকাতে হয়।
আর সাধারণ জ্ঞান সেটা তো বি সি এস প্রশ্ন।বাংলাদেশের আয়তন কত,সুন্দরবনের আয়াতন কত,মাথা পিছু আয় কত, তাজ মহল কে বানায়া, কবে কোথায় বিশ্বকাপ খেলা হয়েছে বিভিন্ন বিষয়ে সাধারণ জ্ঞান মুখস্ত করতে হয়।
আর একটি বিষয় সবারই জানা স্কুলের স্যারের কাছে না পড়লে রেজাল্ট ভালো করা যায় না।
আমি এ সব শুনার পর উনার কাছে প্রশ্ন করলাম এত পড়া শুনা করে আপনার মেয়ের মানসিক, শারীরিক, সাধারণ জ্ঞান বুদ্ধি কেমন বুঝছেন।?তিনি বললেন আমার মেয়ে মাঝে মধ্যে আবোল তাবোল আচার-আচরণ করে।
আমি ওনাকে বললাম আপনি শিক্ষিতা মহিলা ভালো শিক্ষার নামে যেটা হচ্ছে সেটা কি ঠিক?
তিনি বললেন না করে উপায় কি? ভালো স্কুলে এই নিয়ম।আমরা কিছু বললে বলে ভালো না লাগলে অন্য স্কুলে ভর্তি করেন।তাই জেনে শুনে পড়াতে হয়।
আসলে আমরা নিজ হাতে আমাদের সন্তানদের সুন্দর ভাবে বেড়ে ওঠতে দিচ্ছি না।
আজ যারা বড় বড় চাকরি করে দেশ বিদেশে সুনাম করছে তারা সবাই ৭/৮ বছর বয়সে স্কুল গিয়েছে, সরাসরি ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হয়েছে, আর ইংরেজি শুরু ক্লাস থ্রীতে উঠলে।
বর্তমান সরকার নিয়ম করলেও কিন্ডারগার্টেন গুলি সরকারের নিয়ম না মেনে তাদের ইচ্ছেমত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে।
এ ভাবে চলতে থাকলে যে শিশু আগামীদিনের ভবিষ্যৎ, সেই শিশুটি বেড়ে উঠবে মেরুদণ্ডহীন যান্ত্রিক মানুষ হিসাবে।
শিক্ষায় জাতির মেরুদণ্ড। এমন শিক্ষা ব্যাবস্হা মেরুদণ্ডহীন জাতি উপহার দিবে।
আসুন আমরা সবাই মিলে আমাদের সোনামনিদের স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠতে সুযোগ দেয়।